ক্লাস
বন্ধুদবান্ধব সবার ক্যাম্পাস ছুটি। রমজানের শুরুতেই বেশিরভাগ বাসায় চলে গেছে। দু-একজন যারা টিউশনির জন্য যেতে পারেনি এতদিন - তারাও পনের-ষোল রমজানে বাসায় চলে গেছে। রায়ান তখনও প্রেজেন্টেশন আর এসাইনমেন্ট নিয়েই ব্যস্ত। ফেসবুকে একেকজনের সান্ধ্য-আড্ডার ছবি দেখে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কি মরার ভার্সিটিতে ভর্তি হল! পনের রমজান পর্যন্ত সেমিস্টার ফাইনাল। ভাইভা-প্রেজেন্টেশন সব শেষ হতে হতে একুশ রমজান। সেদিন রাতেই তের ঘন্টার জার্নি করে একেবারে পঞ্চগড়। যাক, এবার তাও বেশ কিছুদিন ছুটি পেয়েছে। গতবার ঈদের ছুটিই ছিল মোটে ছয়দিন।
স্কুল মাঠটাই এখনও ওদের আড্ডার জায়গা। সন্ধ্যার পর সবাইকে এখানেই পাওয়া যাবে। ইফতার করেই রায়ান চলে আসল স্কুল মাঠে। অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা। দুই ঈদ ছাড়া সবার সাথে দেখা হয়না। ফেসবুকেই যা কথাবার্তা হয় মাঝেমধ্যে।
দেরিতে আসায় সবার কাছে পঁচানি খেল খানিকক্ষণ। তারপর কথা শুরু হল ব্যাচের ইফতার নিয়ে। সেলফি-টেলফিও তোলা হল কয়েকটা, গ্রুপে আপলোড দেয়ার জন্য। এরপর গাল-গল্প। কার কি অবস্থা- কে কি করছে ইত্যাদি। রায়ানের মনে হল কেমন যেন প্রাণহীন আড্ডাটা। চালানোর দরকার তাই চলছে আরকি। কিছুক্ষণ পর কয়েকজনের ক্যারিয়ার বিষয়ক কথাবার্তা শুরু হল। এসব আঁতলামো ভাল্লাগেনা বলে কয়েকজন উঠে পাশে বসে আগুন জ্বালালো। দু-তিনজন নতুন সিগারেট ধরেছে। আস্তে আস্তে কয়েকটা ছোট গ্রুপ হয়ে গেল। কেও ফোনে কথা বলছে, কেও চ্যাট করছে, কয়েকজন ঈদের পরেরদিন কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করছে। ক্যারিয়ার-ভার্সিটি-প্রেম একেক গ্রুপে একেক বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু সবাই মিলে জমজমাট আড্ডার আগের সেই আমেজ আর নেই। কোথায় যেন একটা ঘাপলা আছে। ফেসবুকের গ্রুপছবিতে একত্রে থাকলেও সবার মাঝে একটা অদ্ভুত দূরত্ব। যেন একদলের আরেকদলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই। বন্ধুদের মাঝেই কি কয়েকটা 'ক্লাস' তৈরি হয়ে গেছে?
Comments
Post a Comment