Posts

Showing posts with the label Others

গল্পটা পরিচিত

শেষ বিকেলে মহানন্দার পাড় ধরে হাঁটতে ভালোই লাগে জাহিনের। বিশেষ করে সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে পশ্চিম আকাশের গোলাপী আভা নদীর পানিতে প্রতিফলিত হয়ে এক অদ্ভুত মাদকতার সৃষ্টি করে। জাহিন তেঁতুলিয়া এসেছে প্রায় একমাস হলো। সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে। এটাই প্রথম চাকরি। বিসিএসের জন্য চেষ্টা করতে করতে যখন প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছে তখন সহকারি শিক্ষা অফিসারের চাকরিটা যেন বাঁচিয়ে দিল। এপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পেয়ে হলের রুমমেট-জুনিয়রদের ডেকে বেশ একপ্রস্থ মিস্টি খাইয়ে দিয়েছিল। জুনিয়ররা যতটা না তাঁর চাকরি আনন্দে মিস্টি খেয়েছে তারচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছে এই ভেবে যে- যাক, এবার তাহলে জাহিন হলের সিটটা ছাড়বে। আসন সঙ্কটের এই নির্মম দিকটার কথা হলের সবাই জানে। বন্ধুদের সাথে সাথে অনেক জুনিয়রও ততদিনে চাকরিতে জয়েন করে থিতু হয়েছে। দুইটা প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের চলার খরচটা উঠে যেত। ছোটবোন ইমা ইডেনের হোস্টেলে থাকে। সেও নিজের খরচটা নিজেই চালায়। অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবি বাবার পেনশনের টাকায় সংসারের খরচটা চলে যাচ্ছিল কোনমতে। বড় ছেলে হিসেবে জাহিনের ওপর চাপ ছিল। এতদিনে সবাই হাফ ছেড়ে বাচল। নদীর পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল জাহি...

অসভ্য নিরবতা

স্যামসাং এর একটা পুরানকালের ময়লা সাদা হেডফোনে সন্দীপের কন্ঠে 'নীল সাগরে' শুনতে শুনতে দক্ষিণের খোলা নীল আকাশের দিকে তাকায়া ডুব দেই স্মৃতির অতলে। ক্ষণে ক্ষণে বৈশাখী হাওয়ার ঝাপটা কাতরতা বাড়ায়া দিয়া যায় । অসভ্য নিরবতায় অভ্যস্ত হয়া গেছি কয়দিনে। এর মাঝেই হুট করে বেজে ওঠা সাইরেন অসহ্য লাগে। অসহ্য লাগে ছ্যাত করে ওঠা বিজলি; বছর কয়েক আগের চারুকলার এক সন্ধ্যার ঝাপসা ছবিটা হঠাৎ পরিস্কার হয়া ওঠে বইলা। তবু ঠায় বইসা থাকি। পশ্চিমে হারায়া যাওয়া চান্দের খোঁজে? ঝড় থাইমা যাওনের আশায়? জানিনা আসলে। অসহায় গাংচিলের ডানার আওয়াজ পাও নাকি? পাওনা কি? #করোনার দিনগুলি ১১ মে, ২০২০

নিখিলেশ স্যার স্মরণে

রাত জাগাটা অভ্যাসে পরিণত হয় কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের শেষের দিকে। এর আগেও রাত জাগতাম না তা নয়। একাবারে নিয়ম করে রাত জাগার শুরু তখন আরকি। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকালের শিফটের ক্লাস শেষে ঘুমোতে যেতাম। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আপ্যায়নে নাস্তাটা করে উস্কোখুস্কো চুলে ইষৎ লাল চোখে ক্লাসে যাওয়া ততদিনে অভ্যাসে দাড়িয়েছে। এক গুরু জহরলাল স্যারের ক্লাস ছাড়া অন্যান্য ক্লাসে স্যারেরা ওপেন ফ্লোরে কোন প্রশ্ন ছুড়ে দিলে স্বেচ্ছায় সেসবের উত্তর দেওয়ার পথ মাড়ানো তো দূরে থাক, স্যার আমার দিকে ইঙ্গিত করে দাঁড়াতে বললেও আসেপাশে বা সামনে-পিছনে তাকিয়ে স্যার যে আমাকে ডেকেছেন সেটা না বোঝার ভান করতাম। ক্লাস তো আর আরামবাগের আড্ডা না যে ধাপ্পা মেরে চালিয়ে দেওয়া যায়। সবসময় যে বেঁচে যেতাম তা নয়। মাঝেমাঝেই গুরুর অলঙ্ঘনীয় আদেশে কিছু সময় দাঁড়িয়ে বাক্যবাণ হজম করতে করতে মুফতে প্রাপ্ত নীতিকথাগুলো ঝুলিতে ভরতাম। তো এমনই একদিন, নিখিলেশ স্যারের বাংলা ক্লাস। স্যারের ক্লাস ভালোই লাগত। সেদিন কার মুখ স্বপ্নে দেখে ঘুম ভেঙেছিল জানিনা; ক্লাস শুরুর কিছুক্ষণ পরেই স্যার সোজা আমার দিকে তাকিয়ে ডাকলেন 'দাঁড়াও মিয়া'। এই রে- গেছে একেবারে। কোনভাব...

কিছু একটা (দেখক)

গলির মোড়ে মতি মিয়ার সিডির দোকানের সাইনবোর্ডটা বদলে ফেলা হয়েছে। 'ঝুমা ভিডিও' লেখা মরচে পরা স্টীলের পাতের সাইনবোর্ডের জায়গায় এখন 'ভিশন কম্পিউটার' এর ঝক ঝকে ডিজিটাল সাইনবোর্ড। ঝুমা মতি মিয়ার বড় মেয়ে - বাপের বাড়ি ছেড়েছে বহুদিন আগে। দুই ছেলের মা এখন। ঝুমার বিয়ের পরেই মতি মিয়ার সিডির ব্যবসা ডাউন খাওয়া শুরু করে। ত্রিশ টাকার ছবির সিডি কিনে কেও তখন ছবি দেখত না। এক ছবি একবার দেখলেই তো শেষ। তারচেয়ে মতি মিয়ার দোকান থেকে দশ টাকায় সিডি ভাড়া নিয়ে দেখলেই হয়ে গেল! বেশ চলছিল 'ঝুমা ভিডিও'র ব্যবসা। এলাকার কমিশনারও পান চিবুতে চিবুতে এসে বলত 'একখান ভাল দেখে সিডি দেও দেখি মিয়া - ঘরের লোক নিয়া দেখন যায় এইরাম একখান সামাজিক ছবি দিও। বোঝই তো যা দিনকাল চলছে! ঘরের লোকজন নিয়া শান্তিমত একখান ছবি দেখুম তাও হয়না - যত্তসব অশ্লীল নাচ গান আর ছোট পোশাকের ছড়াছড়ি! দেশটা যে কই যাচ্ছে না...' সেই জমজমাট সিডির ব্যবসায় হালকা চাপ পড়ল ঐ কমিশনারের ছোট ভাইয়ের ডিশ আনার পর। লোকজন মাসিক একশ' টাকা বিলে ডিশের লাইন নেয়া শুরু করল। সিডি চ্যানেলে প্রতিদিন দুইটা করে নতুন ছবি দেখায় কিনা! সাথে ...

বিষক্ষয় তথা আইইআর বিশতম ব্যাচের র‍্যাগ ডে

Image
সারাদিন স্টেজ কাঁপিয়ে সন্ধ্যায় মল চত্বরে ফায়ার ব্রিদিং, আতসবাজি আর ফানুশবাজি। # বিষক্ষয় মানে আইইআর বিশ ব্যাচের র‍্যাগ ডে'র কথাই বলছি। সেই ভর্তির পরপর কাদেরে এক সিনয়রের থেকে শুনেছিলাম পরপর দুই ব্যাচে নাকি তেমন হয়না। সে ভাই-ব্রাদারি হোক আর ভালোবাসা-বাসিই হোক। আমার বেলায় সেই বড় ভাইয়ের কথার চুড়ান্ত ব্যত্যয় না ঘটলেও প্রথমাংশের ব্যত্যয় ঘটেছে নিশ্চয়ই। ধ্রুপদী সঙ্গীত উৎসব থেকে শুরু করে কনকনে শীতের রাতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে লঞ্চের ছাদে চাঁদপুর ভ্রমণ কিংবা উত্তরের এক শীতের রাতে আগুন পো হাতে পোহাতে বড়ভাইয়ের জন্মদিন উদযাপন - আমার ছোট্ট জীবনের অনেক রঙিন স্মৃতিতেই বিশ ব্যাচ অমলিন। এমনকি কিছুদিন আগে কোন এক কারণে বিশের একজনের সাথে ভুল বোঝাবুঝির পর অন্যরা যেভাবে ডেকে বুঝিয়ে কাছে টেনে নিয়েছেন সেটাও অনুকরণীয় থাকবে। একাডেমিকভাবে সম্মান শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই সম্পর্কগুলো তো আছে, থাকবে। আপনারা জানেন, আপনারা চাইলেও আমাদের থেকে দূরে যেতে পারবেননা - ব্লুবুকধারী হয়ে পৃথিবীর উল্টো তলে বাস করতে চলে গেলেও না :D Dear all of # IER20 , congratulations on your graduation completion.

ক্লাস

বন্ধুদবান্ধব সবার ক্যাম্পাস ছুটি। রমজানের শুরুতেই বেশিরভাগ বাসায় চলে গেছে। দু-একজন যারা টিউশনির জন্য যেতে পারেনি এতদিন - তারাও পনের-ষোল রমজানে বাসায় চলে গেছে।  রায়ান তখনও প্রেজেন্টেশন আর এসাইনমেন্ট নিয়েই ব্যস্ত। ফেসবুকে একেকজনের সান্ধ্য-আড্ডার ছবি দেখে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কি মরার ভার্সিটিতে ভর্তি হল! পনের রমজান পর্যন্ত সেমিস্টার ফাইনাল। ভাইভা-প্রেজেন্টেশন সব শেষ হতে হতে একুশ রমজান। সেদিন রাতেই তের ঘন্টার জার্নি করে একেবারে পঞ্চগড়। যাক, এবার তাও বেশ কিছুদিন ছুটি পেয়েছে। গতবার ঈদের ছুটিই ছিল মোটে ছয়দিন। স্কুল মাঠটাই এখনও ওদের আড্ডার জায়গা। সন্ধ্যার পর সবাইকে এখানেই পাওয়া যাবে। ইফতার করেই রায়ান চলে আসল স্কুল মাঠে। অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা। দুই ঈদ ছাড়া সবার সাথে দেখা হয়না। ফেসবুকেই যা কথাবার্তা হয় মাঝেমধ্যে। দেরিতে আসায় সবার কাছে পঁচানি খেল খানিকক্ষণ। তারপর কথা শুরু হল ব্যাচের ইফতার নিয়ে। সেলফি-টেলফিও তোলা হল কয়েকটা, গ্রুপে আপলোড দেয়ার জন্য। এরপর গাল-গল্প। কার কি অবস্থা- কে কি করছে ইত্যাদি। রায়ানের মনে হল কেমন যেন প্রাণহীন আড্ডাটা। চালানোর দরকার তাই চলছে আরকি। কিছুক্ষণ পর কয়েকজনের ক্য...

যন্ত্রমানব

স্পষ্ট মনে আছে - সেলুনে চুল কাটাতে নিয়ে যেত বাবা। বাসায় নরসুন্দর এনে চুল কাটানো যেত, কিন্তু তাতে আমার বেজায় আপত্তি ছিল। চিল্লাচিল্লি করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলতাম এক চুল না কাটানোর জন্য। পরে অবশ্য 'বিকশো'র স্টিকার কিনে দিতে চাইলে অনেকটা অনন্যোপায় ভঙ্গিতেই সেলুনে গিয়ে চুল কাটাতে রাজি হতাম। ছোট মানুষ। সেলুনের চেয়ারে বসলে আয়নায় নিজেকে দেখা যায়না - চুল কাটতেও সমস্যা। তখন চেয়ারের দুই হাতলের উপর কাঠের তক্তা দিয়ে উচ্চতা বিষয়ক সমস্যার সমাধান করা হত আরকি! তারপর সেই তক্তার উপর বসে কিছুক্ষণ চেয়ার ঘোরাতাম। একসময় চুল কাটা শুরু হত। একটু পর আবার চিল্লাচিল্লি করে চুল কাটানো অফ । ১০ মিনিটের চকলেট বিরতিতে ননি দা হয়ত অন্য একজনের শেভ করতেন। মাঝে মাঝে এই গ্যাপে বাবাই চুল কাটাতেন। ননি দার পুরো নাম ননি গোপাল দাস। তার কাছেই নিয়মিত চুল কাটাতাম। অদ্ভুত ব্যাপার হল তিনি আমার বাবারও দাদা - আমারও দাদা। তো ননিদা বেশ বিরক্ত হত আমার চিল্লাচিল্লিতে। তবে এই বিরক্তির মধ্যেও একটা প্রশ্রয় ছিল। চুল কাটা শেষে ক্ষুর দিয়ে বর্ডার দেয়ার পার্টটাই ছিল সবচে' কঠিন। পানি দিয়ে ভিজিয়ে ক্ষুর টানলে গা শিউরে উঠত। আবার চিল্লাচিল্ল...

হেডফোন

সবাই বলে মানুষ চেনা যায় জুতায়। আসলে মানুষ চেনা যায় হেডফোনে। এই যেমন প্যাঁচ খাওয়া হেডফোন সবসময় কানে গোঁজা থাকলে বুঝতে হবে ছেলেটা বা মেয়েটা আসলে বিষণ্ণতায় ভুগছে। আবার নিঃসঙ্গতায় ভোগা মানুষদের হেডফোন হয় এখানে-ওখানে টেপ লাগানো, অনেকটা ঝিমিয়ে যাওয়া মতন। এরা সবকিছুর মায়া ছাড়তে পারে কিন্তু হেডফোনের মায়া এরা কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারেনা ; পুরোনো হেডফোনটাই টেপ-টুপ লাগিয়ে চালিয়ে নেয়। সাথে জোড় করে আঁকড়ে ধরা পুরোনো কিছু স্মৃতি। নতুন চকচকে হেডফোনওয়ালারা হয় বিলাসী। এরা হেডফোনে গান শোনে কিছুটা অবসর কাটানোর জন্য, বাকিটা শখের বশে। সে কথা থাক। হেডফোনের অভাববোধ প্রবলভাবে মাথা চারা দিয়েছে দুদিন হল। শেষ হেডফোনটা পরশু বাস থেকে নামতে গিয়ে টান লেগে ছিঁড়ে গিয়েছে। আগে থেকেই ওটার অবস্থা অবশ্য বেশ খারাপ ছিল - শরীরভরা কালো-সাদা টেপের ব্যান্ডেজ। হেডফোনটা কিনে দিয়েছিল অদ্রি - নীলক্ষেত থেকে। গত ফাল্গুনে দুজনে হাটছিলাম শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে। আমার এক কানে হেডফোনে চলছে ডিফারেন্ট টাচের 'শ্রাবণের মেঘগুলো '। অদ্রি কি যেন বলছিল। অন্যমনস্ক ছিলাম বলে শুনতে পাইনি। হঠাৎ আমার সামনে দাড়িয়ে একটানে হেডফোনটা খুলে ফেলল। আমি ...

আনসার ভিডিপির মাঠঃ স্মৃতিকাতরতা

শেষরাতে অনেকটা আনমনেই জীবনের হিসেব মিলাতে বসি। সেই হিসেব কষতে কষতেই পুরোনো দিনে ফিরে যাই। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাবাদের বাসার দেয়ালটা। তিব্বত বল সাবানের এড ছিল মাথামাথি -এপাশ থেকে ওপাশে। সামনে জব্বার চাচ্চুর দোকান। রাস্তার উল্টাপাশে আনসার ভিডিপির মাঠ। মাঠটা বেশ নিচু। বর্ষায় পুরো মাঠটা পানির নিচে চলে যেত। কাশেম আংকেল ছিল আনসার ভিডিপির ইনচার্জ। প্রতি বর্ষায় এই মাঠ কাম খালের পানিতে মাছ ছেড়ে বেশ কামাতেন তিনি। আমরা পিচ্চিরা বেশ ভয় পেতাম উনাকে, উনার সেই ভয়ঙ্কর গোঁফের জন্যই হোক আর বাজখাঁই হুংকারের কারণেই হোক। শুনলাম গেলবার হজ্জ করে এসছেন তিনি। আগের মত মেজাজও নেই। আনসার ভিডিপির মাঠটাও মাটি ভরে বেশ উঁচু করা হয়েছে। বর্ষাকালে আর পানি জমেনা, মাছও ছাড়া হয়না। মাঠটায় এখন ট্রেইনিদের ট্রেনিং চলে। গেলবার বাসায় গিয়ে দেখলাম সেটাও আটফুটে দেয়ালে ঘিরে ফেলা হয়েছে। বাইরে থেকে ভেতরে কি হচ্ছে দেখাই যায়না। এপাশে জব্বার চাচ্চুর মুদি দোকানটা নেই। সেখানে মার্কেট হয়েছে। মার্কেটের আড়ালে সাবাদের বাসার সামনের দেয়ালটা এখন দেখাই যায়না... এসব ভাবতে ভাবতেই রুমের দেয়ালে টিক দেয়া ঘড়িটায় চোখ পরে - ভোর পাঁচটা বাজে। অনিচ্ছায় ঘুমি...

অনিয়মের নিয়ম

মানুষ মাত্রই সিস্টেমেটিক। আমি যতই বলি আমি বাউন্ডুলে- নিয়ম মানিনা, তবুও আমি একটা নিয়মের মধ্যেই চলি। অনিয়মটাই এখানে নিয়ম। আচ্ছা একটা উদাহরণ দেয়া যাক, আমি রাতে না ঘুমালেও প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট /অনির্দিষ্ট সময় ঘুমাই। এখানে প্রচলিত অর্থে নিয়ম না মানলেও আমি কিন্তু একটা অপ্রচলিত নিয়ম মানছি। অর্থাৎ আমি সিস্টেমেটিক। লোকে যত খাপছাড়াই বলুক না কেন সবাই আসলে একেকটা নির্দিষ্ট ফাংশনে চলে। হতেপারে একেকজনের ফাংশন একেকরকম। আসলে আমরা বাউন্ডুলে না, আমরা চেতনভাবে নিয়ম ভাঙি; সেটাও একটা নির্দিষ্ট নিয়মেই! জগতেও আসলে বিশৃঙ্ক্ষলতা বলে কিছুই নেই। আমাদের কাছে যেটা বিশৃঙ্খলা সেটার মাঝেই আছে বিশাল এক শৃঙ্ক্ষল! আচ্ছা একটা উদাহরণ দেই। ফিজিক্সের ভাষায় এন্ট্রপি হল বিশৃঙ্ক্ষলতার পরিচায়ক। কিন্তু সেই এন্ট্রপিও কিন্তু একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই বাড়ে!! আপনি যতই চেষ্টা করুন - আপনি নিয়মের বাইরে যেতে পারবেন না। বড়জোর সচেতনভাবে এক/একাধিক নির্দিষ্ট নিয়মে একটা/কয়েকটা নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করবেন! তাও ঐ নিয়মই....

বাংলা অব্দের কথা

এসো হে বৈশাখ , এসো এসো ... যে বাংলাসালের নতুন বর্ষ কাল বরণ করে নেব চলুন সংক্ষেপে তার সম্পর্কে কিছু জেনে আসি .. প্রথমেই উৎপত্তির কথায় আসা যাক। মুঘল সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সাল ( ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ , ৯৬৩ হিজরী ) থেকে বাংলা সাল গণনার শুরু। মূলত সেসময় চন্দ্রমাসে সাল গণনায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় সৌরমাসের হিসাবে একটি সাল গণনার জন্য বাদশাহকে অনুরোধ করা হয়। তার প্রেক্ষিতেই বাংলা সালের সুচনা। কথা হল ২০১৪ - ১৫৫৬ = ৪৯৮। যেহেতু আকবর ১৫৫৬ সালে সিংহাসনে আরোহণ ককরেন এবং সে বছর হতেই বাংলা সাল গণনার শুরু এবং এ বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ পুরোপুরি একমত , তাহলে প্রশ্ন আসে যে ৪৯৮ বছরে কিভাবে বাংলা সাল ১৪২১ ( আগামী কালের হিসাবে ) হল ! আবার আকবরিয় তথা বাংলা সাল সৌর বছর , মানে ৩৬৫ দিনে বছর। তাহলে ফাকটা কোথায় ? আসল কথা হল , যে বছর বাংলা সাল গণনা শুরু হয় সেটা ছিল ৯৬৩ হিজরী। তো আকবরিয় সালে করা হল কি , ৯৬৩ থেকেই সাল গণনা শুরু করা হল হিজরী সালের সাথে মিলিয়ে। এখন প্রশ্ন তাহলে...

আনমনে

হঠাত ঘুম ভেঙে গেল নাহিয়ানের। মাথা ঝিমঝিম করছে - ভ্যাপসা গরম রুমে। ফ্যান বন্ধ, তারমানে কারেন্ট নেই। মোবাইলের স্ক্রিন অন করে পিটপিট চোখে সময় দেখে, সাড়ে চারটা বাজে মাত্র। মোটে দু ঘন্টা ঘুমিয়েছে তাহলে। এই ভ্যাপসা গরমে আর ঘুম আসবে না। চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়ায় নাহিয়ান। বেশ বাতাস বাইরে। কানে হেডফোন লাগিয়ে অর্থহীনের আনমনে ২ প্লে করে ফেসবুকে ঢুকল ও। ১৭ টা নোটিফিকেশন। যে কাজটা কখনও করেনা সেটাই করল। একবারে চোখ বুলিয়ে নিল নোটিফিকেশনগুলোয়। লাস্ট স্ট্যাটাসটায় কয়েকজন কমেন্ট করেছে। রিপ্লাই দেওয়ার কোন ইচ্ছা বা আগ্রহ দেখা গেলনা। অথচ সবসময় খুটেখুটে সবার কমেন্ট পড়ে রিপ্লাই দেয় নাহিয়ান।

একজন এইচএসসি পরিক্ষার্থীর কিছু অপ্রকাশিত কথা

হ্যা, আমি ১৪ ব্যাচের একজন পরিক্ষার্থী।আর দশজন সাধারণ ছাত্রের মত আমার বইয়েও ধুলোর স্তর জমেছিল, দু বছর খোলা হয়নি বলে। লাইব্রেরীর তাকের ননীচের বইয়ের মত- ঝেড়ে ফুকে নতুন বলে বিক্রি ককরা যযাবে ওগুলো। অনেক বই তো কিনিই নি। মার্চ থেকে বইগুলো যা একটু আমার নিশ্বাসের ছোয়া পায়! এইতো সেদিন তপন স্যারের ফিজিক্স ফার্স্ট পেপার আর সেকেন্ড পেপার নিয়ে আসলাম,তাও নীলক্ষেত থেকে। বইমেলা শেষ হওয়ার পর খেয়াল করলাম বই নেই। বাবার কাছে তো এখন বই কেনার টাকাও চাওয়া যায়না। তাই নীলক্ষেত ই ভরসা। এখনও বোটানি বই কেনা বাকি। এতদিন এরটা-ওরটা-লাইব্রেরীরটা দিয়েই চলে গেছে। তাই বইগুলো কেনা হয়নি। অনেকে হয়ত বিশ্বাস করতে চাবেন না, কিন্তু আমার কাছের বন্ধুরা জানে ব্যাপারটা কতটা সত্যি। সে কথা যাক। ফার্স্ট ইয়ারে কিছুদিন পড়েছিলাম। ফার্স্ট টার্মের আগে। টার্মের পর বাতাস লাগল গায়ে -সেই বিখ্যাত বয়সের বাতাস! সাথে শাহবাগ আন্দোলন তো আছেই। পড়াশোনা সেই যে শিকেয় তুললাম আর নামানো হয়নি।মার্চ থেকে যা শুরু করেছি সেটা আর যাই হোক, ইন্টারের পড়াশোনা তো নয় ঈ! ও, মাঝে সাভার ড্রাজেডি, লংমার্চ, ট্যুর ইত্যাদি ইত্যাদি তো ছিলই। ভাল কথায় সময়ের প্রয়োজনে -খারাপ কথা...

ছোটলোকের ভালবাসা

ব্যস্ত শহর ঢাকার সবচে' কর্মব্যস্ত এলাকা মতিঝিল। বিশেষত কমলাপুর স্টেশন থেকে আরমবাগ মোড় হয়ে শাপলা চত্বর - এরাস্তাটায় সারাক্ষণ ভীড় থাকেই। একে বাণিজ্যিক এলাকা তার উপর সারাদেশ থেকে আসা স্টেশনের মানুষের ভীড়, সাথে বেশ কয়েকটা স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী তো আছেই। রাস্তার সাথে সাথে দুপাশের ফুটপাতেও পথচারীর ভীড় বেশ। এ ব্যস্ত ফুটপাতেই ছোট্ট টং দোকান রাকিবের। ছোটবেলায় এলাকায় বেশকিছুদিন মাদ্রাসায় পড়েছিল রাকিব। তারপর বেশকিছুদিন ভোকেশনালে। সেখান থেকেই এসএসসি পাশ করে সে। এরপর ঢাকায় আসে বাবার সাথে। বাবা সবজির ব্যবসা করে আর সে এই টং দোকানে চা বেচে। একসারিতে পাচ-ছটা টং। অন্যদের চেয়ে রাকিবের দোকানেই ভীড় বেশি। বয়সে তরুণ হওয়ায় স্কুল-কলেজের ছাত্রদের সাথে অনেকটাই সহজ সম্পর্ক ওর। কলেজের ছেলেপুলে আড্ডা দেয় ওর টং এ চায়ের কাপ কিংবা সিগারেট হাতে। বিশেষত বিকালের দিকে আড্ডাটা জমে বেশ। চা-সিগারেট বিক্রিতে ব্যস্ত থাকলেও মাঝে মাঝেই আড্ডায় যোগ দেয় রাকিব, সে নিরব শ্রোতা। বাজারে আসা নতুন মোবাইল, ক্লাস বাংক, বাপের পকেট থেকে টাকা মারা এসবই আড্ডার বিষয়বস্তু। মাঝেমধ্যে স্কুল-কলেজ ফেরত মেয়েদের মেয়েদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করত: ...

ফিরে আসে নীড়ে - ০১

১. - কিরে, কি অবস্থা? -এইতো ভালই। তোর কি অবস্থা? -ঐ ডালে-ভাতে বেচে আছি আরকি! তা হঠাত কি মনে করে? -এই খোজ-খবর নিলাম আরকি :) -সুর্য আজকে কোনদিকে উঠছে মামা!? কাহিনি কি বল? এম্নি এম্নি ফোন দেয়ার লোক তুই না! -কি যে বলিস। বুঝিসই তো, পড়াশোনা নিয়ে একটু ব্যস্ত। -হুম,তাতো থাকবিই। তা পড়াশোনার কি অবস্থা? -এইতো চলতেছে। আচ্ছা বিকালে ফ্রি আছিস নাকিরে? -আমিতো সপ্তাহে সাতদিনই দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা ফুল ফ্রি!! কেন বলতো? -এম্নিই। আচ্ছা বিকালে বইমেলা যাবিনাকি একটু? -কেন, তুই আসবি নাকি? -হুম -যেতাম একটু ঘুরতে। -আচ্ছা বিকালে আয়। সাইন্সল্যাব আয়া ফোন দিস। -ওকে। -আচ্ছা কয়টায় আসবি? -এই ধর ৩:৩০ -৪:০০ টায় -ওক্কে, ডান। ২. নাফিস আমার স্কুল ফ্রেন্ড। একসাথে জিলা স্কুলে সেই ক্লাস থ্রি থেকে টেন পর্যন্ত পড়ছি। এসএসসির পর ও ভর্তি হল রাজউকে আর আমি ঢাকা কলেজে। বেশ ভাল ছাত্র নাফিস, পড়ুয়াও বটে। এসএসসি তে বোর্ডে প্লেস করছিল। এখনও ভাল রেজাল্ট করছে কলেজে। আমার মত ট্র‍্যাকচ্যুত হয়নি। আমি বখে গিয়েছি আসলেই। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কিছুদিন ভালই পড়াশোনা করছিলাম, হাফ ইয়ারলিতে রেজাল্টও বেশ ভাল ছিল। তারপর...... -দোস্ত কই তুই? -বাসায়। তুই কই?...