Posts

Showing posts from January, 2014

বিজয়ে আমার কোন উল্লাস নেই

এ বিজয়ে আমার কোন উল্লাস নেই। বিজয় মানে আহত ভাইয়ের পাশে বসে কাটানো হসপিটালের কোন এক অস্থির রাত হলে সেই বিজয়ে আমার উল্লাস নেই। বিজয় মানে যদি এই হয়- ছোট্ট মেয়ে বিজয় দিবসে বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাটতে পারবেনা পরম নির্ভরতায় তবে সেই বিজয়ে আমার কোন উল্লাস নেই। বিজয় মানে যদি হয় মাঝরাতে কম্বল মুড়িদিয়ে ঘুমিয়ে থাকা নিরীহের ঘুম অকস্মাৎ আক্রমনে চিরনিদ্রায় পরিণত হওয়া তবে সেই বিজয়ে আমার কোন উল্লাস নেই। বিজয় মানে যদি হয়- স্কুলব্যাগ ঘাড়ে বাড়ি ফেরা কিশোরের চোখের দীপ্ত দৃষ্টির বদলে অনাহুত বিপদের ভয় তবে সেই বিজয়ে আমার উল্লাস নেই। বিজয় মানে কি মাথায় পতাকা বেঁধে লাল-সবু আর কালো শাল কাঁধে উল্লাস করা? বিজয় মানে কি শ্রান্ত রাতে ঘরে ফেরার পথে আধার গলিতে ঘাতকের অপছায়া? বিজয় মানে কি ষোলকোটি কঙ্কালভরা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল এরিয়া? আমি সেদিন করব উল্লাস- যেদিন নীতি-চেতনার কাব্য শুধু নয়, এরাষ্ট্রে পাব সাম্য-ঐক্য-মুক্তি; আমি সেইদিন গাব বিজয়ের ঐকতান!

পথিক

রাস্তায় হাটতে আগের মত আগ্রহ পাইনা - ঢাকার রাস্তায় বিশেষত। আগে রাস্তায় হাটতে হাটতে হরেক রকম মানুষ দেখতাম। এখন একপ্রকার মানুষই দেখি - সন্দেহবাদী মানুষ। সবাই কেমন যেন সন্দেহের চোখে তাকায়। চা দোকানদারদের স্বাভাবিক সারল্যও নেই। পরপর দুকাপ চা খাওয়া বহুদিনের অভ্যাস। আগে এককাপ চা খেয়ে আরেকটা চা দিতে বললে দোকানি আগ্রহভরে চা বানিয়ে দিত। এখন দুকাপ চা চাইল সন্দেহের চোখে তাকায়। আগে মাঝরাতে ডিউটিরত পুলিশদের সাথে গল্প করতাম - জীবনের গল্প। এখন কথা বলতে গেলে আগে জিজ্ঞেস করে কি করি, কই থাকি, এত রাতে বাইরে কি। আগেও জিজ্ঞেস করত -আগ্রহভরে, এখন জিজ্ঞেস করে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে। সোডিয়াম লাইটের হলুদ আলোর একটা বৈশিষ্ট্য আছে - হঠাত দেখলে চেনা মানুষকেও অচেনা মনে হয়। এখন এনার্জি বালবের সাদা আলোয় যান্ত্রিক মানুষের কর্মব্যস্ততা স্পষ্ট দেখা যায়। মাঝেমাঝে ভাবি এই রাতেবিরাতে উন্মাদের মত উদ্দেশ্যহীন হাটাহাটি ছেড়ে দেব। কিন্তু পারিনা। আমিযে পথিক - পথই আমার ঠিকানা। মনখারাপে এই পথই আমার আশ্রয়স্থল। আমি তাই হেটে যাই নগরীর প্রশস্থ রাজপথে...

পিকেটার

বরাবরের মত আজ সন্ধ্যায় বেড়িয়েছিলাম শহর পরিভ্রমনে। মা প্রতি হরতালের আগের রাতে এবং হরতালের দিন সকালে ফোন করে বের হতে নিষেধ করে দেন। কোথায় কখন কি ঘটছে সে আপডেট ও পাই উনার কাছেই। সারাদিন বাধ্য ছেলের মত বের না হলেও সন্ধ্যায় বের না হয়ে পারলাম না। হরতালের আগের রাতে ব্যস্ত মানুষের ত্রস্ত মনে ঘরে ফেরা আর হরতালের সন্ধ্যায় খা খা রাজপথে নিয়ন আলোয় হঠাৎ দুএকজনের ভৌতিক ছায়া দেখার লোভ কোনমতেই ছাড়তে পারিনা। হাটছি ফাকা রাস্তায়। হঠাৎ দু একটা বাস জানান দিয়ে যাচ্ছে শহরটা এখনও কোন বিরানভুমি নয়। ফাকা রাস্তায়ও হর্ণ দেয়ার কারণ বোধগম্য হচ্ছেনা। হর্ণের আওয়াজটা নিরবতা খানখান করে দিচ্ছে। আচ্ছা বাসের ড্রাইভাররা কি কোনদিনও বদলাবেনা? রাস্তার মোড়ে একটা বাদামের দোকান। মাস গেলেই কড়কড়ে কয়েকটা নোট পায়না বলেই পেটের জ্বালায় এদের বাদাম বেচতে হয়, হরতালে দোকান পুড়ার ভয় নিয়েও... যার সাথে যার বিরোধিতা থাকুক - সবার ক্ষোভের বলি হয় এরাই। পেশিশক্তির শো ডাউনে এরাই তো সহজ শিকার। আচ্ছা এরা কি মুখ ফুটে কিছু বলার সুযোগ পাবে কখনও?? বাদামের দোকানের আসেপাশের কয়েকজন পথশিশু ঘোরাঘুরি করছে। এদের কেও কেও হয়ত পিকেটিং করে কটা টাকা আয় করে পেট পুরে ...

হয়তো (ক্ষুধা ও প্রেম)

শরতের পড়ন্ত বিকেলে রিকসার হুড তুলে তোমার নগর প্রদক্ষিণ আমার কাছে বরাবরই বিলাসিতা মনে হয় যখন একটা পাচ টাকার কয়েনো থাকেনা একটা ধুম্র শলাকা কিনে ফুকবার মত কিংবা থাকলেও ছেড়া পকেটে হাত ঢুকিয়ে মনে পড়ে মেসের বাজার করা বাকি এখনও। বালিকা! আমি তোমার প্রেমে পড়িনি,মোহাবিষ্টও হইনি। গলির মোড়ে তোমার ফুচকা খাওয়া দেখে তোমার হাসির বিকট শব্দেও হারিয়ে যাইনা আমি বরং ভাবি পয়সার অহেতুক অপব্যয় ঐ প্রাণোচ্ছল হাসি আমার মধুর লাগেনা পেটে ক্ষুধা থাকলে কিন্নরীর কন্ঠও বড় বিকট লাগে। সৌভাগ্যবতী! ভাগ্যের দোহাই দেইনা কখনও জানি একদিন আমিও লাখপতি হব। হয়ত প্রমোদভ্রমণে বের হব গাড়ি হাকিয়ে হয়ত পথে পথে খুজব একটি শান্ত শীতল মুখ যার বিকট কন্ঠও হয়তো সেদিন সুমধুর মনে হবে! অস্বীকার করিনা - আমি বদলে যাব সময়ে সেদিন সত্যিই আমি তোমার প্রেমে পড়ব- আজ নয় কেননা প্রেমের চেয়ে ক্ষুধার জ্বালা যে অনেক কম...

কতিপয় হিমু

(হুমায়ুন আহমেদ স্মরণে) তিন শিফটে ডিউটি চেঞ্জ হয়। সেই হিসেবে মাসে দশদিন রাত বারোটা - সকাল আটটা ডিউটি করতে হয় আনিসের। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে আনিস - গার্ডের চাকরি। গার্ড কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও আনিস তার কাজের জন্য গর্ববোধ করে। সে এই বিশাল বিল্ডিংয়ের প্রহরী। বর্ডার গার্ডেরা যেমন দেশটাকে আগলে রাখে শত্রুর হাত থেকে তেমনি আনিসও এ বিল্ডিং টা পাহাড়া দেয়। আচ্ছা আনিসের যেমন পাহাড়া দিতে দিতে বিল্ডিংটার উপর মায়া পড়ে গেছে তেমনি বর্ডার গার্ডদেরও কি দেশপ্রেম বেড়ে যায় রাত জেগে বর্ডার পাহারা দিয়ে? রাস্তায় কিসের যেন ছায়া চোখে পড়ে - চিন্তায় ছেল পড়ে আনিসের। হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে খালিপায়ে ছেলেটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। রাত তিনটা বাজে - ঘড়ি দেখে আনিস। বড়লোকের ছেলেমেয়েদের যে কত আজব কাজবার! খাওয়া পড়ার টেনশন নেই - রাতে বিরাতে উদ্ভট সাজে ঘুড়ে বেড়ানো। তিন ঘন্টায় প্রায় তিরিশ জনকে দেখেছে আজ - হলুদ পাঞ্জাবি, খালিপা। কি হল আজ কিজানে! হয়ত নতুন কোন ফ্যাশন এইটা - রাতে বিরাতে পকেটছাড়া পাঞ্জাবি পরে খালিপায়ে হাটা। হঠাত একটা অদ্ভুত জিনিস চোখে পরে আনিসের। খালিপায়ে ছেলেটার পাশে একটা কুকুর লেজ উচ...

বেড়ে ওঠার গল্প - ০১

আজ গণিত ক্লাসটেস্টের খাতা দিয়েছে। আদনান অনেক কম মার্কস পেয়েছে। আদনান ক্লাসের ফার্স্ট বয়। ও সবসময়ই হাইয়েষ্ট মার্কস পায়। আদনানের আম্মু শুনলে অনেক রাগ করবে। আম্মু আদনানের মুখে ফার্স্ট হওয়া আর হাইয়েষ্ট মার্ক পাওয়া ছাড়া কিছুই শুনতে চান না। এইতো কিছুদিন আগে একবার রাফির চেয়ে বাংলায় চার মার্কস কম পেয়েছিল বলে একমাস ক্যাডবেরি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ক্যাডবেরি আদনানের প্রিয় চকলেট। আম্মু মার্কসের কথা শুনলে অনেক রাগ করবে। আদনান ভাবছে আজ আর বাসায় যাবে না। স্কুল শেষে গেটের বাইরে দেখে ড্রাইভার আঙ্কেল ওর জন্য দাড়িয়ে আছে। আদনান ভাবে - ও বাসা না গেলে ড্রাইভার আঙ্কেলের চাকরি নট হয়ে যাবে। ড্রাইভার আংকেলের একটা ছেলে আছে - আশিক, আদনানের সমবয়সী। আদনান আশিককে মাঝমাঝেই ক্যাডবেরি দেয়, আম্মু আব্বু বাইরে গেলে ওর সাথে গল্প করে, খেলে। ড্রাইভার আংকেলের চাকরি গেলে তো আশিকও চলে যাবে,তখন আদনান কার সাথে খেলবে? নাহ - বাসায় যেতেই হবে। ভাবতেই আদনান গাড়িতে উঠে বসে। রাতে খাবার টেবিলে আম্মু জিজ্ঞেস করে আজ তো খাতা দিয়েছে - আদনান কত পেয়েছে? এখন মার্কস শুনলে আম্মু রেগে যাবে। কাল আবার ছোট বোনে টার জন্মদিন। আদনান ভাবে কি করবে। আচ্ছ...

ঝড়া পাতার গল্প - ০১

হালকা ঠান্ডা পড়েছে শহরে। সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই চায়না। কাথাটা আরেকটু টেনে ঘুম দেই সকালে। শীত পরেছে মতিঝিলেও। রাতে হালকা কুয়াশাও পরে। বাদশা থাকে কমলাপুর স্টেশনে। সারাদিন সিটি বাসে বাংলাদেশ প্রতিদিন আর ভোরের কাগজ বিক্রি করে। হরতাল না হলে দিনশেষে ৫০ টাকার মত পায়। এটাকায় দুইবেলা খাওয়া হয় কোনমতে। কালরাতে বেশ ঠান্ডা ছিল। স্টেশনের ছাউনি আছে বলে কুয়াশা পরেকিনা বোঝা যায়না। প্লাটফরমে বসার চেয়ারমতন যে তাক গুলো আছে  সেগুলোতেই ঘুমায় বাদশা। একে বাইরের ঠান্ডা তারউপর সিমেন্টের ঠান্ডা। বুকটা বসে গেছে। বাদশার মনে পরে মা থাকতে ঠান্ডার সময় বুকে জড়িয়ে রাখত, সরিষার তেল মালিশ করে দিত সর্দি লাগলে। তখন ওরা কাওরানবাজার বস্তিতে থাকত। সেবার কিসের মারামারিতে মায়ের মাথায় চোট লাগল, হাসপাতালে যাওয়ার আগেই সব শেষ। গাঁজাখোর বাবা যে কোথায় গেল কে জানে! বড়বোনটা এক রিকসাওয়ালার সাথে ভেগে গেল। বস্তিতে তাদের ছাউনিতে নতুন লোক আসল। তারপর থেকে বাদশা মিয়া স্টেশনেই থাকে। আগে বোতল কুড়াত, এখন পেপার বেচে। নাহ ঠান্ডা পরেই গেছে - ভাবে বাদশা। আজকেই একটা পলিথিন খুঁজতে হবে আর একটা মোটাদেখে কার্টুন আনতে হবে বিছানোর জন্য। আজকে দেরী হয়ে গেছ...

এটিএম বুথ

গলির মোড়ে মোড়ে ব্যাংকের বুথ। পকেটে টাকা নিয়ে ঘোরার দরকার নাই - ছিনতাইকারীর ভয় নাই। যখন দরকার বুথে যাও - পিন দিয়ে টাকা তুলে নাও। নানা - গলার কাটা তোলার বা কাগজ আটকানো পিন না - পাসওয়ার্ড! এর জন্য অবশ্য একাউন্টে টাকা থাকা লাগে। কবি যতই বলুক - 'গ্রন্থগত বিদ্যা পরহস্তে ধন...... ' কবির কথায় মানুষ ভুলেনা। স্বেচ্ছায় মানুষ এখন নিজের সাধের জমানো টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসে একটা চেককাগজে বিনিময়ে! আসলে কবি তো সেকেলে! নিজের কাছে টাকা থাকলেই বরং ঝামেলা। তারচেয়ে ব্যাংকে রাখাই ভাল - প্রয়োজনের সময় যেখান থেকে খুশি তুলে নেওয়া যায়। আর গ্রন্থগত বিদ্যা? হাহ - এখন কি মানুষ পড়াশোনা করে?! ইউ নো - পরিক্ষার আগের রাতে ফেসবুক ইনবক্সে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। ভাল রেজাল্ট করতে চাও? বইটই ফেলে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে ফেল - পরিক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র পেয়ে যাবে। ও - যা বলছিলাম, এখন তো আর পকেটে টাকা নিয়ে ঘুরা লাগেনা। আমার অবশ্য ব্যাংক একাউন্ট আছে - তাতে টাকাও আছে, গোটা পাচশ টাকা! কিন্তু ঐ পাচশ তো আর তোলা যায়না। কার্ডটাও হারিয়ে ফেলেছি। আমার মত আগোছালো পাব্লিকের জন্য এইসব না। হয়ত দেখা যাবে পিনও ভুলে গেছি নাহ - পিন এ...

গিনিপিগ

কি আর হবে গোপন করে সব হয়েছে ফাঁঁস জীবন বায়ু বেড়িয়ে গেছে আমি এখন লাশ মৃত্যু ক্ষুধায় ধুকে ধুকে জয় পেয়েছি শেষে এখন আমার অভাব নেই আর না ফেরার এই দেশে শাসক-শোষক পারবেনা কেও রক্ত খেতে আর একলা রাজা রাজ্যে একা করছে হাহাকার কোথায় পাবে লাল রক্ত সব করেছে শেষ কালে কালে গিনিপিগ সব মরে নিরুদ্দেশ।

বিভ্রান্তি

বিভ্রান্তির শেষ পরিচ্ছেদে- যখন হতাশার চাদর ঠিক কুয়াশার মত চারদিক থেকে ঢেকে দিতে চায় আমায় আমি ভাবি অন্ধকারের রাজ্যে এই কুয়াশা আগলে রেখেছে যতনে শীতের প্রকোপ অবহেলার গোড়ার কথা - যখন একবিন্দু নির্ভরতাই ফিরিয়ে আনতে পারে হতাশার শীতে ঝড়ে পরা সুখের সবুজ পাতা তখন অষ্টপ্রৌড়ের তীব্র চাহনি কাঠ কয়লার মত ধোঁয়াটে আগুন জ্বেলে গাঢ় করে ধুসর কুয়াশা দিকভ্রান্ত পথিক, মাঝপথে- একটু থামে নিজেকে চিহ্নিত করার ব্যার্থ প্রয়াসে হাওয়ায় মিলে যায় ফিরতি পথে জমা শিশিরকণা গোলকধাধার মত সেই একই চক্রের পুনরাবর্তনে ক্লান্ত পথিক খুজে বেরায় অবলোহিত সুর্যরশ্মি উদ্ভাসিত দৃষ্টিতে দেখতে চায় শিশির বিন্দুতে সেই একচিলতে আলোর বর্ণিল প্রতিফলন পথিক সেতো জেনেও জানেনা- সেই আলোকরশ্মিই শিশিরের মৃত্যু পরোয়ানা আপাত সাফল্যের তীব্র ঝলকানিই মহাপ্রাপ্তির অন্তরায় হায় মানবমন - কতই না অসহায়!